সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৩

৪র্থ বর্ষ । সংখ্যা ৭ম

প্রচ্ছদ ঃ আল নোমান
৪র্থ বর্ষ । সংখ্যা ৭ম ।৯ কবি-র কবিতা  ও ১ টি -কবিতা বিষয়ক গদ্য


পৃথিবীর সব আলো
আবুল বাসার সেরনিয়াবাদ


ধানসিঁড়ি জলসিঁড়ি জলাঙ্গী বা কীর্তিনাশা পাড়ে
সোনালী ধানের ক্ষেত কাচপোকা ঘাসফুর ছুঁয়ে
এখনো যে জীবনের বহ্নিমান চিতা জ্বলে তারে
জীবনানন্দের চোখে ইচ্ছে হয় দেখতে দাঁড়ায়ে

কখনো সবুজ গাছ ভাঁটফুল মাছরাঙা হয়ে
কখনো ভোরের কাক-ধবল বকের মত উড়ে
জাতিস্মর কবি এক এখনো চলেন বুঝি হেঁটে
বিজয় সিংহের মতো বীরবাহু সিংহলের পথে

কিশোরী কান্তার প্রেমে নিবিষ্ট নিমগ্ন এক কবি
সময়ের সিঁড়ি বেয়ে মৃতের পুরীর মধ্যে একা
দেশ কাল পিছে ফেলে অচিন গঞ্জের পথে চলে
পরণ-কথার গন্ধ রাজ্যপাট স্মৃতি পটে আঁকা

অচিনপুরীর থেকে জেগে ওঠে মৃত কিশোরীরা
মধুমালা শঙ্খমালা চন্দ্রমালা বেহুলা লহনা
ক্ষীরের মতন মৃদু দেহ লয়ে জিয়ন কাঠির
শবর বালিকা এক সে কবির হিয়া ছুঁয়ে যায়।

পৃথিবীর সব আলো ম্লান হয় বেঁচে থাকে প্রেম
কবির হৃদয় আর কিশোরীর হৃদয়ের নিকষিত হেম।  

**************************************

বঞ্চিত রাতের ক্ষুধা বিলাস

ড.জাহাঙ্গীর আলম



আজ উপোসের রাত

উনুনে জ্বলেনি লেলিহান শিখা-

আঁতে পৌঁছেনি একদানা শস্যকণা

পিপাসার জলে ভেজেনি গলা

ভিজেছে অন্য জলে,

দু'মুখো জল এসে ভারী করে দেয় আমার বাউল আউলা কণ্ঠস্বর

ক্ষুধা আর তৃষ্ণার জমজ তীব্রতায়

চোখের আলো হারিয়ে যায় ধূ ধূ আঁধারে,

পিয়াসী আত্মার হাহাকারে

নেশাখোরের ন্যায় হাতড়িয়ে বেড়াই

সামান্য খাদ্যের কৌশুলি সন্ধানে,

অত অঢেল বৈভবে নিত্য অনাহারি

বঞ্চনার প্রবাহিত বাস্তবতায়

মৌলিক বিশ্বাসগুলো খানখান হয়

দুমড়ে মুষড়ে ভেঙ্গে পড়ে সভ্যতার চতুর্সীমায়,

বিশাল অপ্রস্তুতে ক্ষুধাতুর স্বপ্নরাউড়ে যায়

মেড়ে যায় ভুবন সীমায়,

ধূসর ঝাপসা উঠোনে দেখি অসাধুর নগ্ন নৃত্য,

ক্ষুধার আগুনে আঁতুড় পুড়ে যায়

গলে যায় চারপাশের জল শুন্য কাতরতা

দেমাগি প্রতিপক্ষ ভেবে হারাতে চায় ইনিংস ব্যবধানে,

ঐতিহ্যের শিকড় উৎপাটনের অপেক্ষায় থাকি

আগামীর নতুন প্রহসনে,

রোদ জ্বলা পথে খাদ্যহীন বাঁকে

দ্বীপহীন আঁধারে মানুষের সহিংস আস্ফালনে

নির্জন নিকুশ রাত
*************************************
তুহিন দাস
থাবা
.....
কথার ওপরে এলো থাবা আস্তে চলে যায় দিন
যেমন পাশে পাশে রেখার সমান্তরালে ফোটো
টুপটাপ আদরে শুধু নামডাকাটুকু নিয়ে আছো
এর বাইরে আরো কিছু চাই সে ছায়া কথার ওপরে এলো

কথার ওপরে আলোমুখ ঘিরে থাকা
হালকা নীলাভ আভায় ভরে আছে জীবন
ফুঁয়ে উড়ছে রাত্রি এখন হিমশিম
পাগল একটা সুর শোনা যাচ্ছে কথার ওপরে

কথার ওপরে হাত ও মুখ সুখের সে দিন শেষে
তবু অন্য এক সুখের খোঁজে নিজেকে আলতো বেধে
অরণ্যে কেউ একলা চলে গেছে আবার জাগো
আদৌ কি পড়ে আছে কথার ওপরে এলো থাবা

আস্তে চলে যায় দিন গায়ে হলুদ মেখে
পোড়া দুধের গন্ধ পেয়ে আঁতকে ওঠো
এপাশ ওপাশ করো কিছু পোড়ে না তো
এর বাইরে আরো চাই সে ছায়া কথার ওপরে
************************************
এলোবৈনারী নদীর ইতিবৃত্ত
আরণ্যক টিটো

আশৈশব যে নদীকে নদী বলে জানা,
বলাযায়, চৈতালী দুপুরে
দাড়িয়াবান্দ্বা কিঙবা গোল্লাছূট কিঙবা বউচি খেলাশেষে
ডুব ডুব প্রাণজ সাঁতার।
                                     সেই কাজলঙ
                                     যে
                                     আমার আশৈশব নদী।
                                     ভাঙাগড়া কালান্তরে অনিত্যের বসবাস
                                     হাইব্রিড প্রজননে তার বুক চিঁড়ে আসে
                                     দুরাগত ঢেউকলা,শস্যাঙক নামতা,  জননীর
গোলাঘরে অন্নপূর্ণা ধানমেলা


                                               শ্যমলগঞ্জের দূরবর্তী

                  সূবর্ণপুর গাঁয়ের মাঝ দিয়ে

                        সবুজবন্ধনী এঁকে বয়ে যাওয়া নদীর দুইধারে

                 দোলায়িত কাশবনে ওড়ে ঝিনুক দিদির সফেদ ওড়না।

কখনোবা মাঘিপূর্ণিমায় তার বুকে দেখা যায়
বেহুলাভাসান
শিকারী গুলিতে পরাহত পাখিশব,
ইলিশের রূপালী মৌসুমে ইচেছময় সাতরঙা পালতোলা নাঁয়ের বহর,
তস্কর জাহাজের বাণিজ্য।

                                     ধূসর কালাকালের ভীড়ে ভেসে আসা
                                     বিশ্বায়ন বাণিজ্যের ঢেউ
                                     লুটে নেয় ঝিনুক দিদির বুক ভরা
মুক্তারাশি,
                                     মরম সুখের আহ্বলাদে বাঁধা গাঙশালিকের
ঘরদোর ভলোবাসা,
                                     ভাটিয়ালি জনপদ, পলিসংস্কৃতি। ...

কখনোবা

নদীবাঙলার নয়নপাতায় জমা জলে ফোঁসা তেজস্বিনী

                   কেড়ে নেয় সংসারধর্ম, রঙের বিনস্ত্য গৃহস্থালী।
নদেয় বালিকা শ্যমলীরা আজ ভাসমান নদী
নদীগর্ভে
জলডোবা চাঁদ
মেঘের আচঁল টেনে বলে :
সব নদী মোহনায় মেশে, সকল নারীও!
সুতরাং নদী ভালোবেসে মোহনায় ফেরা কিঙবা আঁজলা ভরা জল পিপাসায় নদীমালা অন্বেষন,
এরূপ পিপাসা থাকা ভালো! ... 
****************************
যদি পথ ভুল না হয়
মর্তুজা হাসান সৈকত

কংক্রিট যাপিত অথর্বের জীবন অথবা লাল-রক্ত, কাম-রক্ত
যাপিত জীবন
বিদায় জানিয়ে দেবো কোনো একদিন-,
অতঃপর পুনর্জন্মের প্রার্থনায় খুব গোপনে গোপনে
চলে যেতে পারি গভীর নিরাপদ কোথাও ।
শৌখিন আকাশ, বিশাল পর্বত, মেঘপাখি যেখানে
জীবনের সুনিশ্চিত প্রতিধ্বনি তোলে রৌদ্রোজ্জ্বল ফালগুণ হয়ে ।

মূলত, বিবর্ণ স্বপ্নগুলোর বিষস্পর্শের মাঝেও যাবতীয় অশুভ স্বরকে
ফসকে ফেলে কিংবা
দু’এক আঁজলা সত্য রঙের বোধ বহন করে যারা
সক্রিয় উন্মাদ এখনো
ওদের কাছেই চাইতে পারি সান্ত্বনার বিনম্র শিমুল ।
নয়তো এ প্রহরে,
মৃত্যু দরোজার পাশাপাশিই হেঁটে যাব অস্তিত্বকে তুলে ধরে অর্থপূর্ণভাবে ।

এভাবেই যেতে যেতে কোনোদিন যদি কোনোক্রমে পৌঁছে যেতে পারি
পুনর্জন্মপ্রার্থী আকাশ কিংবা মেঘপাখির কাছে
পৌঁছে যেতে পারি
হাজার মাইল ব্যাপ্ত এই বিবর্ণ নরক পেরিয়ে
তবে সত্যরঙের এক অভেদ চিত্রই এঁকে দেবো সেদিন
এঁকে দেবো সেসময়
আগামীর সেইসব বিশ্বস্তদের মনন আর মগজে,
ভূমিষ্ঠ হয়েই শিখে নিচ্ছে যারা কামুক নেকড়ের ধারালো আঁচর সব !
**************************

  একাকীত্ব

  বেবী সাউ


আবারও সাঁঝ নেমে এলো ।

আজ আবারও জেগে জেগে বেয়াড়া মনপাখি
চেনা দিন , চেনা স্ত্রোত আর হাওয়া মুঠি মুঠি
অথচ ,একটিপ সুখঝিলে মনখারাপি ঢালি

ফিনকি সুরে বেঁধে দে মেঘেরই ধুম
কথা থাক বারান্দাতে , কথা যাক নদী সাথে
এনে দে রাত্রির নান্দনিক বেমালুম

বাকি কিছু তোমাদেরই অব্যক্ত স্থাবর
বুঝে গেছি আমি আজও শূন্যেরই গুণিতক ।
*******************************
 কাগজের বাঘ

 সাম্য রাইয়ান

 আগুন হতে জন্ম নেয়া কাগজের বাঘ
 আমি তারে করেছি রচনা;
 রচনামাঝে সে লাফায় তবুও,
 উদভ্রান্ত আগন্তুক অবাক বিষ্ময়ে
 কেবলি তাকিয়ে থাকে
 বাঘের প্রতি
 বাঘ, বাঘ, আবার বাঘ;
 আমা দ্বারা রচিত
 কাগজের বাঘ।
 লড়াইঅম হৃৎপিন্ড লয়ে তারে
 দেখেছে কিছুজন বাজারে, চলিতে-ফিরিতে।
 কে জানে তাহার হৃদয়ের ডাক, অথবা
 শোনা কি যায়?
 বালকেরা তবু নেংটিঅলা
 পিছু লয়েছিল, তাড়া করবার

***************************
প্রায়শ্চিত্ত
 প্রান্তিক জসীম

আমি আমার সমস্ত পাপ স্বীকার করতে চেয়েছি

জন্মান্তর ধরে জমানো পাপ, যা রীতি ও রেওয়াজ ভেবে

অবলীলায় -নি:সংকোচ করে গেছি

যারা আজও সেপথ আগলে আছে ধর্ম ভেবে

ভুলে-ভ্রমে স্বাভাবিকতায় আজও তাই করে !

আমি সেসব পাপ স্বীকার করতে চেয়েছিলাম

কিন্তু তা গ্রহণ করবে এমন একটি লোক খুজে পাইনি

মেঘ,বৃষ্টি, বায়ু কেউই তা নিতে চাইলো না

কেউ না ; এমন কি তুমিও না !

তাহলে কি একবিন্দু সত্যের ওপর জন্মাবে মিথ্যের বিষবৃক্ষ ?

যার ফল, ছায়া-মায়া আর কত ধূর্ততার দক্ষতা বাড়াবে ?

তারচেয়ে থাক, সবকিছু ঘুমিয়েই থাক
********************************

শুজনৈক মাছিটির সাথে আবার যদি দেখা হয়, আমরা একই থালায় খাচ্ছি
ফারহাদ নাইয়া
  রেলিং ঘেঁসে ঝোলে কতক রুগ্ন আম

হলদে ফড়িং’র পিছু দুয়েক দুষ্ট ।

  ছোপ ছোপ ভালোবাসা নিয়ে ব্যাস্ত রোদ

  আকবরি চিন্তায় হাঁটছে থ্রিজি

  বটের নিচে মগন পিঁপড়ারা ।

মেয়েটি কাঁঠাল পাতা মনের
ফুলবাবুর গায়ে খাসি গন্ধ ।

প্রকৃতির মাই ধরে ঝোলে

  দুষ্ট বানর-জাতিসংঘ...

  বিধবা রঙ নিয়ে তরুনী নাইটেংগেল

  খ্যালে ; আন্তরিকতা-আন্তরিকতা ।

  পাতিলের পরিসরে আমার কৈয়া মন
   লাফিয়ে লাফিয়ে গুদাম ভরে অক্সিজেন ।
  অতএব প্রশ্নমতে,

  রুগ্ন আম-হলদে ফড়িং-দুয়েক দুষ্ট-ব্যাস্ত রোদ-থ্রিজি
  মগন পিঁপড়া-পাতার মন-খাসির গন্ধ=
  নির্বর্তন
ধু, আমার মূর্খতা-অর্বাচিনতা ইতিহাস হয়ে থাক !